1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : রাকিবুল হাসান শান্ত : রাকিবুল হাসান শান্ত
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

দলবদলে আলোড়ন অব্যাহত পশ্চিমবাংলার রাজনীতিতে, অমিতের সভায় থাকছেন শুভেন্দু

  • Update Time : শুক্রবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২০
  • ৩০২ Time View

বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা : পশ্চিমবাংলার রাজনীতি এখন অভিনব রূপ ধারণ করেছে। ২০২১ সালের নভেম্বরে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হতে চলেছে। তাতে প্রধান শাসক দল তৃণমূলের পাশাপাশি অংশ নিচ্ছে বিজেপি, কংগ্রেস এবং সিপিএম ও অন্য বামপন্থী দলগুলি। আর এই প্রথম নির্বাচনের আগে দলবদলের মাধ্যমে তুমুল আলোড়ন তৈরি হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক মঞ্চগুলিতে। দলবদলে প্রধান আকর্ষণ অবশ্যই রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ও বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। গত কয়েকদিনে প্রথমে মন্ত্রিত্ব, পরে বিধায়ক এবং শেষে বৃহস্পতিবার দল ছাড়েন তিনি। তার পর বহু নেতাই তাঁর পথ অনুসরণ করে হয় দল ছাড়ছেন, নতুবা প্রকাশ্যেই দলের বিরুদ্ধে তোপ দাগতে শুরু করে দিয়েছেন।

যদিও এতসবের মধ্যে শুক্রবার সকলের চোখের আড়ালেই থেকে গেলেন শুভেন্দু অধিকারী। সংবাদ মাধ্যমের নজর ছিল কলকাতা বিমান বন্দরের দিকে। কিন্তু সকলের চোখে এক প্রকার ধুলো দিয়েই এদিন পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি থেকে গাড়িতে সোজা ভুবনেশ্বর চলে যান। সেখান থেকে বিমানে দিল্লি পৌঁছন। দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক নিয়ে স্বাভাবিক কারণেই দুই পক্ষের কেউই মুখ খোলেননি। তবে জানা গিয়েছে, দু’জনের আলোচনায় পশ্চিমবাংলার রাজনীতি, শুভেন্দুর ভবিষ্যৎ এবং নিরাপত্তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় দু’জনের। তার পর এদিন রাতেই বিমানে অমিত শাহের সঙ্গে কলকাতায় চলে আসেন। শনিবার মেদিনীপুরের কলেজ মাঠে অমিত শাহ জনসভা করবেন। শোনা যাচ্ছে, ওই সভায় যোগ দেবেন শুভেন্দু। সেখানেই তাঁর বিজেপিতে যোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করবেন অমিত শাহ।

পাশাপাশি, প্রত্যাশিত ভাবেই শুভেন্দু অধিকারীর ইস্তফাপত্র গ্রহণ করেননি রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার তিনি জানিয়েছেন, তিনি নিয়ম মেনে ইস্তফা দেননি। তাই তিনি তাঁকে ২১ ডিসেম্বর রাজ্য বিধানসভায় তাঁর দফতরে এসে দেখা করতে বলেছেন। সেখানে তিনি তাঁর বক্তব্য শুনবেন। তার পর সিদ্ধান্ত নেবেন। শুভেন্দু অধিকারী সোমবার রাজ্য বিধানসভায় বিমানবাবুর সঙ্গে দেখা করবেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা গিয়েছে। এদিকে, শুভেন্দু ঝড়ে টালমাটাল মমতার মুসলিম ভোট ব্যাঙ্কও। তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন কবিরুল ইসলাম। পদত্যাগের পর তিনি স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন, আগামিদিনে তিনি শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গেই থাকবেন।

এরই পাশাপাশি রাজনৈতিক চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছেন বালির তৃণমূল বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়া। দলের সঙ্গে যখন তাঁর তীব্র মতপার্থক্য চলছে, ঠিক সেই সময় এদিন তিনি আচমকাই রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের সঙ্গে দেখা করেন। এই সাক্ষাৎকে বৈশালী সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎকার বলে উল্লেখ করলেও রাজনৈতিক মহলের মতে, তিনিও হয়তো শুভেন্দুর পথই অনুসরণ করতে চলেছেন। আবার, শুভেন্দুর পথ অনুসরণ করে তৃণমূল ছেড়ে দিয়েছেন ব্যারাকপুরের বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত, কাঁথি উত্তরের বিধায়ক বনশ্রী মাইতি। এদিন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে দল ছেড়ে দিলেন তৃণমূল বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত। বনশ্রী মাইতি তাঁর ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সিকে। দলের প্রাথমিক সদস্যপদ–সহ সমস্ত পদ থেকেই ইস্তফা দিয়েছেন তিনি।

বাঁকুড়ায় তৃণমূলের সহসভাপতি তথা প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং তাঁর সঙ্গে ৩ জন যুব তৃণমূল নেতাও দল ছেড়ে দিয়েছেন। তাঁদের পথ অনুসরণ করে তৃণমূলে ইস্তফা দিয়েছেন ১২ জন কাউন্সিলর। এ ছাড়া তৃণমূল ছেড়ে দিলেন পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান ভবেশ চট্টোপাধ্যায়। এই তৃণমূল নেতা শুভেন্দু অনুগামী বলে পরিচিত। শুক্রবার তাঁর পাশাপাশি আরও ১১ জন কাউন্সিলরও তৃণমূল ছাড়েন। তৃণমূল থেকে ইস্তফা দিয়েছেন পুরুলিয়ার জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতোর ছেলে সুদীপ মাহাতোও। তৃণমূলের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক চুকিয়ে দিয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের পরিচিত নেতা প্রণব বসুও। তিনি শনিবার বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন।

এসবিএসটিসি–র চেয়ারম্যান তৃণমূলের কর্নেল দীপ্তাংশু চৌধুরিও তাঁর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। তাঁর ঘনিষ্ঠ দুই তৃণমূল কাউন্সিলর অমিত তুলসিয়ান এবং অভিজিৎ আচার্য, লিগাল অ্যাডভাইসার রবিউল ইসলামও আসানসোল পুরসভার প্রশাসকের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন। শুধু তৃণমূল নয়, শুভেন্দুর প্রভাবে সিপিএম ছেড়েও বেরিয়ে এলেন এক বিধায়ক। হলদিয়ার সিপিএম বিধায়ক তাপসী মণ্ডল দলের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করে দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁকে মেদিনীপুর কলেজিয়েট মাঠে অমিত শাহের জনসভায় দেখা যেতে পারে। দলবদলে তৃণমূল যে চাপে পড়ে গিয়েছে, তার প্রমাণ পাওয়া গেল দলের বৈঠকেই। এদিন কালীঘাটে নিজের বাড়িতে ওই বৈঠক ডেকেছিলেন স্বয়ং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে ছিলেন দলের রাজনৈতিক পরামর্শদাতা প্রশান্ত কিশোর ছাড়াও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম এবং সুব্রত বক্সি। সেখানে প্রশান্ত কিশোরকে সরাসরি মমতা জিজ্ঞাসা করেন, ‘এ–সব কী হচ্ছে? কেন হচ্ছে?’

প্রশান্ত কিশোর জবাব দেন, ‘দুটো কারণে। একটি হল, এজেন্সির ভয় দেখানো হচ্ছে। তাই ভয়ে চলে যাচ্ছেন অনেক নেতা। আর দ্বিতীয় কারণটি হল, লোভে পড়ে। অনেক প্রলোভন দেখানো হচ্ছে নেতাদের।’ কিন্তু রাজনৈতিক মহলের মতে, মমতার নীতিই বুমেরাং হচ্ছে এখন। কেন না, কংগ্রেস, সিপিএম ভাঙিয়ে বহু বিধায়ক ও প্রভাবশালী নেতাদের তৃণমূল নিজেদের দিকে টেনে নিয়েছিল। সে ক্ষেত্রেও পুলিশ–প্রশাসন দিয়ে বিরোধী নেতা ও নেত্রীদের ওপর চাপ তৈরি করার অভিযোগও অনেকবার উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এক কংগ্রেস নেতা প্রশ্ন তুলেছেন, আজ বিজেপি যদি কেন্দ্রীয় এজেন্সি (‌সিবিআই, ইডি)‌ দিয়ে একই কাজ করে, তা হলে মমতা পাল্টা অভিযোগ করেন কী করে? যদিও এদিনের বৈঠকে মমতা সাফ জানিয়ে দেন, যাঁরা চলে যাচ্ছেন, তাঁরা দলের বোঝা। যাঁরা যেতে চান, যেতে পারেন। প্রয়োজনে তিনি একাই দল করবেন। লড়বেনও।

অন্যদিকে, রাজ্যের মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ও তৃণমূলে থাকবেন না বলে দাবি করলেন দলেরই অন্য বিধায়ক পাঁচলার গুলশন মল্লিক। শুক্রবার তিনি দাবি করেছেন, ‘রাজীবদা এখনও দলে আছেন। তাই দলের শীর্ষ নেতারা এই প্রশ্নের জবাব দেবেন। কিন্তু, আমরা সবাই জানি, আজ যেমন শুভেন্দু অধিকারী দল ছেড়ে দিয়েছেন, ঠিক তেমনই রাজীবদাও চলে যাবেন।’ যদিও নিজের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা রেখে দিয়েছেন ডোমজুড়ের বিধায়ক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে। পাশাপাশি, বর্ধমানে রাজনৈতিক চর্চায় চলে এসেছেন কালনার বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু। তিনিও দলের বিরুদ্ধে তোপ দাগতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনার পর বিদ্রোহে সাময়িক ইতি টেনেছেন।

সেই তিনিই অভিযোগ করেছেন, ‘‌কালনা পুরসভার আগের নির্বাচনে ছাপ্পা ভোট দিয়ে জিতেছিল তৃণমূল। কালনা পুরসভার প্রশাসক দেবপ্রসাদ বাগ জমি–বাড়ির অবৈধ কারবারে যুক্ত। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, তিনি যদি শেষ পর্যন্ত তৃণমূলে থেকে যান, তা হলে কালনার মানুষের মনে তিনিই যে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন, তাঁর জবাব কে দেবে? বিশ্বজিৎবাবু অবশ্য এখন চুপ করে গিয়েছেন। তাই বিষয়টি নিয়ে চর্চা অব্যাহত রয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়েই। আবার, পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারি তৃণমূলেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শুক্রবার তিনি কলকাতার নিউ আলিপুরের সুরুচি সঙ্ঘ ক্লাবে এসে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে ছিলেন দলের রাজনৈতিক পরামর্শদাতা প্রশান্ত কিশোরও। তবে জিতেন্দ্রর তৃণমূলে থেকে যাওয়ার অন্য কারণ রয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কারণ, জিতেন্দ্র তিওয়ারির বিজেপিতে যোগ দেওয়ার তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা আসানসোলের বাবুল সুপ্রিয়। তাঁকে সমর্থন করেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, সায়ন্তন বসু এবং অগ্নিমিত্রা পাল।

তাঁরা জানিয়েছিলেন, বিজেপির বিরুদ্ধে এতদিন তৃণমূলের হয়ে যাবতীয় দুষ্কর্ম করে এসেছেন জিতেন্দ্র। তাঁকেই দলে নিলে কর্মীদের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হবে। পরিস্থিতি বুঝে জিতেন্দ্র তিওয়ারি বৃহস্পতিবার জানিয়েছিলেন, তৃণমূলই তাঁকে বিজেপির বিরুদ্ধে যাবতীয় অপকর্ম করতে বাধ্য করেছে। যদিও তাতে গেরুয়া–বরফ খুব একটা গলেনি। বরং বিজেপির সর্বভারতীয় সহসভাপতি মুকুল রায় সরাসরি কোনও মন্তব্য না করে ইঙ্গিতবহ ভাবে জানিয়েছেন, সকলকেই শুভেন্দু অধিকারী ভেবে নেওয়া ঠিক হবে না। এর পরই জিতেন্দ্র বুঝে যান, তাঁকে বিজেপিতে যোগ দিতে অনেক বেগ পেতে হবে। তাই তৃণমূলেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। জানান, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তিনি ক্ষমা চেয়ে নেবেন।

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..